
| Headline : |
|
৪০তম বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি : প্রসঙ্গ মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা
|
![]() শিক্ষাতথ্য, ঢাকা (২২ জুন) :- মিয়ানমারের প্রাচীন নাম ব্রহ্মদেশ। এর সীমান্তবর্তী দেশ হলো : বাংলাদেশ, ভারত, চীন, থাইল্যান্ড এবং লাওস। রোহিঙ্গা মুসলিমগণ ‘আরাকান’ রাজ্যের প্রাচীন অধিবাসী। ১৯৮৯ সালে আরাকানের নাম বৌদ্ধ জাতীয়তাভিত্তিক ‘রাখাইন’ রাখা হয়। আরাকানের পূর্ব নাম ‘রোসাং’ বা ‘রোসাঙ্গ দেশ’। রোসাং বা রোসাঙ্গ শব্দের বিকৃতি উচ্চারণ আধুনিক ‘রোহিঙ্গা’। রোসাং বা আরাকান সমুদ্র উপকূলবর্তী হওয়ায় পূর্বকাল থেকেই বিদেশের সাথে দেশটির ভালো যোগাযোগ ছিল। আরব ব্যবসায়ীরা প্রাচীনকাল থেকেই জলপথে রোসাঙ্গে যাতায়াত করতেন। এতে আরবদের সাথে তাদের ব্যবসায়িক লেন-দেনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সম্পর্কও স্থাপিত হয়। এতে ‘রোসাং’ অধিবাসীরা আরব ব্যবসায়ীদের সংস্কৃতিতে প্রভাবিত হয় এবং ইসলামের সাম্য- সৌহার্দ্যে আকৃষ্ট হয়ে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এতে আরাকানে ধর্মান্তরিত মুসলিমের সংখ্যা বেড়ে যায়। লোককাহিনী থেকে জানা যায়, খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকের মাঝামাঝিতে মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া নামক এক আরব মুসলিম সেনাপতি বিপুলসংখ্যক সৈন্য নিয়ে রোসাঙ্গে আসেন এবং সে দেশের রাণী কৈয়াপুইকে বিয়ে করেন। পরে তিনি সৈন্য-সামন্ত নিয়ে রোসাঙ্গেই বসবাস করেন। তিনি যে পাহাড়ে বাস করতেন আজও তা ‘হানাফিয়া টঙ্কি’ এবং ‘কৈয়াপুই টঙ্কি’ নামে পরিচিত। ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকের শুরুতে বর্মিজ রাজা আরাকানে আক্রমণ করেন। আক্রান্ত আরাকান রাজা প্রতিবেশি চট্টগ্রামের রাজার মাধ্যমে তৎকালীন গৌড়েশ্বর সুলতান জালালুদ্দিন মুহাম্মদ শাহের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। গৌড়ের সুলতান আরাকান রাজাকে সহযোগিতা করতে হাজার হাজার সৈন্য প্রেরণ করেন। এতে বর্মিজ রাজা পিছু হটতে বাধ্য হন এবং আরাকান রাজা পুনরায় ক্ষমতায় বসেন। আরাকান রাজা তার ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করতে গৌড়ের মুসলিম সৈন্যদের নিজ রাজ্যে বসবাসের সুযোগ দেন। এতে অনেক সৈনিক সেখানে বিয়ে করে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। এভাবে আরাকানের মুসলিম সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। এতে আরাকান রাজশক্তির সাথে প্রতিবেশি চটিগাঁ ও বঙ্গদেশের সুসম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং উভয় দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কেরও উন্নতি হয়। এজন্য তৎকালীন বাঙালি কবি আলাওল, দৌলত কাজি, মীর মরদান, আইনুদ্দিন প্রমুখ মুসলিম কবিকে আরাকান রাজদরবারের সভাকবি নিয়োগ দেয়া হয়। ♥১৭৮৪ সালের আগে আরাকান রাজ্য বার্মা বা ভারতের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।♥ ১৭৮৪ সালে বার্মিজরা আরাকান রাজ্যটি দখল করে হাজার হাজার আরাকানিকে হত্যা করে। এ সময় তারা আরাকানের অনেক মসজিদ-মন্দিরও ধ্বংস করে। বার্মিজদের অত্যাচারে তখন প্রায় দুই লক্ষ আরাকানবাসী চট্টগ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করে। এরপর তারা♥ ১৮২৪ সাল পর্যন্ত বার্মিজ শাসন বজায় রাখে। এ সময় বৃটিশরা ভারত পেরিয়ে বার্মায় আগ্রাসন চালায়। ♥ফলে ১৮২৪-১৮২৬ খ্রি. পর্যন্ত বৃটিশদের সাথে বার্মিজদের যুদ্ধ চলে। ইতিহাসে এ যুদ্ধকে প্রথম আ্যংলো-বার্মিজ যুদ্ধ বলা হয়।♥ এ যুদ্ধে বার্মিজরা পরাজিত হলে ১৮২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘ট্রিটি অব ইয়ান্দারো’ চুক্তির মাধ্যমে আরাকান রাজ্যটি বৃটিশ-ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ♥আবার ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের আওতায় ♥১৯৩৭ সালের ১ এপ্রিল বার্মাকে বৃটিশ-ভারত থেকে আলাদা করা হয়। এ সময় আরাকানের জনগণ রাজ্যটির স্বায়ত্তশাসন চায়। কিন্তু জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আরাকানকে বার্মার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ♥এরই প্রেক্ষিতে ১৯৪২ সালে আরাকানে রাখাইন বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলিমের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। এতে রাষ্ট্রীয় পোষকতায় হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। আর প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম আরাকান ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এ সময় রাখাইন বৌদ্ধরা রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রায় তিন‘শ গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। এতে হাজার হাজার আরাকানী মুসলিম রোহিঙ্গা বাস্তুহারায় পরিণত হয়। ♥বৃটিশ থেকে বার্মার স্বাধীনতা লাভকালে ১৯৪৮ সালে রোহিঙ্গা মুসলিমরা স্বাধীন আরাকানের দাবিতে এক ব্যর্থ সশস্ত্র বিদ্রোহ করে। এতে তৎকালীন বার্মিজ সরকার মুসলমানদের উপর চরম নির্যাতন-নিপীড়ন চালায় এবং অনেক মুসলিমের ভূ-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। আর তাদের চলাফেরা, শিক্ষা-সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয় । ♥এরপর ১৯৬২ সালে জেনারেল নে-উইনের সামরিক সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের অবৈধ অভিবাসী আখ্যাত করে তাদেরকে দেশ থেকে বিতাড়নের চেষ্টা করে। ♥আবার ১৯৭৪ সালে ‘ইর্মাজেন্সি ইমিগ্রেসন এ্যাক্ট’ করে বার্মা সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের জাতীয়তা কেড়ে নেয়। ♥ এরপর ১৯৮২ সালে ‘বার্মা সিটিজেনশিপ ল’ এর মাধ্যমে আর্ন্তজাতিক আইনে স্বীকৃত রোহিঙ্গা মুসলিমদের বেশ কিছু মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে নেয় বার্মা সরকার। ♥১৯৮৯ সালে বার্মার সরকার আরাকান রাজ্যের নাম পরিবর্তন করে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর জাতীয়তাভিত্তিক ‘রাখাইন’ রাজ্য নামকরণ করে। এতে রোহিঙ্গা মুসলিম জাতিসত্তা মুছে দিয়ে রাখাইন বৌদ্ধ জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে বৃটিশ-বার্মায়, স্বাধীন বার্মায় ও আধুনিক মিয়ানমারে দীর্ঘ কয়েক দশক যাবৎ আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিজ দেশে পরবাসীতে পরিণত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে জোর করে বৌদ্ধ ধর্ম পালনে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ আছে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে। মুসলিম স্থাপনাসমূহ রাখাইন বৌদ্ধরা দখল করে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসালিমদেরকে দিয়ে বিনাপারিশ্রমিকে সামরিক স্থাপনা, সেতু, প্যাগোডা, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল নির্মাণ এবং পুকুর খননের কাজে নিয়োজিত রাখে। রোহিঙ্গা মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন শর্ত ও করারোপ করে থাকে। অধিকন্তু রাখাইন বৌদ্ধরা অনেক মুসলিম মহিলা-তরুণী ধর্ষণও করেছে!.ক) ১৯৪২ সালে আরাকানে রাখাইন বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলিমের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। খ) ১৯৪৮ সালে ইংরেজরা বার্মাকে স্বাধীনতা দেয় গ) ১৯৬২ সালে জেনারেল নে-উইনের সামরিক সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের অবৈধ অভিবাসী আখ্যাত করে তাদেরকে দেশ থেকে বিতাড়নের চেষ্টা করে। আবার ♥ ১৯৭৪ সালে ‘ইর্মাজেন্সি ইমিগ্রেসন এ্যাক্ট’ করে বার্মা সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের জাতীয়তা কেড়ে নেয় । .ঘ) স্থানীয় বৌদ্ধদের সঙ্গে রাখাইনবাসী রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ শুরু হয় ১৯৭৮-৭৯ সালের দিকে। ১৯৭৮ সালে সামরিক হামলার কারণে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা মুসলমান উদ্বাস্তু হিসেবে প্রথম বাংলাদেশে প্রবেশ করে।.♥***১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনে তাদের জন্মগত অধিকারই অস্বীকার করা হয়। ♥ ***১৯৮৯ সালে বার্মার সরকার আরাকান রাজ্যের নাম পরিবর্তন করে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর জাতীয়তাভিত্তিক ‘রাখাইন’ রাজ্য নামকরণ করে। ♥***শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসে বার্মায় বাঙালি সমাজের একটা চিত্র পাওয়া যায়। ♥ ***মিয়ানমারে প্রবেশপথ ইয়াঙ্গুন। রোহিঙ্গারা একে আরাকান বলে থাকে। ♥ ***মিয়ানমারের জনক হলেন অং সান। মুসলিম রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের অধিবাসী। ♥***শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহের কবর মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে আছে । বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকা হল মংডু। ***১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনে তাদের জন্মগত অধিকারই অস্বীকার করা হয়। ***জাতিসংঘের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল কফি আনানের নেতৃত্বে রোহিঙ্গা বিষয়ক একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল । ***২০০০ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘নাফযুদ্ধ’ হয়েছিল। ♥*** সীমান্ত বাহিনী- বর্ডার গার্ড পুলিশ ( বিজেপি ) রাজধানী-নাইপিদো মুদ্রা-কিয়াট ***৫৬ কি.মি . দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট নাফ হচ্ছে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের বিভক্তিকারী নদী। ♥ প্রকৃতপক্ষে এটি ১২ টি শাখায় বিভক্ত। ♥***১৯৬৬ সালে তত্কালীন পাকিস্তান এবং বার্মা সরকার এই মর্মে চুক্তি সাক্ষর করে যে, তারা কেউই নদীর কিংবা এর শাখাগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহে হস্তক্ষেপ করবে না। ♥***মিয়ামার থেকে বাংলাদেশে আগত ৩টি নদীর নাম-নাফ, সাঙ্গু, মাতামুহুরী। ♥*** অংসান সূচি প্রথম গৃহবন্দি হন- ১৯৮৯ সালে।.♥***তুমব্রু- ঘুনধুম সীমান্ত -- বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়িতে অবস্হিত । ♥*** শাহপরীর দ্বীপ -- টেকনাফে অবস্থিতি । রোহিঙ্গা সম্পর্কে যে ৭ টি তথ্য জেনে রাখা ভাল: রোহিঙ্গা জাতির প্রায় ভুলে যাওয়া ইতিহাসের কিছু তুথ্য তুলে ধরা হলো: ১)রোহিঙ্গাদের আবাসভূমি আরাকান ছিল স্বাধীন রাজ্য। ১৭৮৪ সালে বার্মার রাজা বোডপায়া এটি দখল করে বার্মার অধীন করদ রাজ্যে পরিণত করেন। ২)আরাকান রাজ্যের রাজা বৌদ্ধ হলেও তিনি মুসলমান উপাধি গ্রহণ করতেন। তার মুদ্রাতে ফার্সি ভাষায় লেখা থাকতো কালেমা। ৩)আরাকান রাজ দরবারে কাজ করতেন অনেক বাঙালি মুসলমান। বাংলার সাথে আরাকানের ছিল গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক। ৪)ধারণা করা হয় রোহিঙ্গা নামটি এসেছে আরাকানের রাজধানীর নাম ম্রোহং থেকে: ম্রোহং-রোয়াং-রোয়াইঙ্গিয়া-রোহিঙ্গা। তবে মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্যে আরাকানকে ডাকা হতো রোসাং নামে। ৫) ১৪০৬ সালে আরাকানের ম্রাউক-উ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা নরমিখলা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বাংলার তৎকালীন রাজধানী গৌড়ে পলায়ন করেন। গৌড়ের শাসক জালালুদ্দিন শাহ্ নরমিখলার সাহায্যে ৩০ হাজার সৈন্য পাঠিয়ে বর্মী রাজাকে উৎখাতে সহায়তা করেন। নরমিখলা মোহাম্মদ সোলায়মান শাহ্ নাম নিয়ে আরাকানের সিংহাসনে বসেন। ম্রাউক-উ রাজবংশ ১০০ বছর আরাকান শাসন করেছে। ৬) মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যচর্চ্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল রোসাং রাজ দরবার। মহাকবি আলাওল রোসাং দরবারের রাজ কবি ছিলেন। তিনি লিখেছিলেন মহাকাব্য পদ্মাবতী। এছাড়া সতী ময়না ও লোর-চন্দ্রানী, সয়ফুল মুল্ক, জঙ্গনামা প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ রচিত হয়েছিল রোসাং রাজদরবারের আনুকূল্যে। ৭) ভাই আওরঙ্গজেবের সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরাজিত হয়ে মোগল যুবরাজ শাহ্ সুজা ১৬৬০ সালে সড়ক পথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হয়ে আরাকানে পলায়ন করেন। তৎকালীন রোসাং রাজা চন্দ্র সুধর্মা বিশ্বাসঘাতকতা করে শাহ্ সুজা এবং তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। এর পর আরাকানে যে দীর্ঘমেয়াদী অরাজকতা সৃষ্টি হয় তার অবসান ঘটে বার্মার হাতে আরাকানের স্বাধীনতা হরণের মধ্য দিয়ে। সূত্র: বিবিসি বাংলা |